সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

আপনি কি জানেন সোরিয়াসিস রোগ কেন হয়? বা সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় এবং সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। কারণ আমাদের আজকের পোস্টে আমরা সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় এবং সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

এছাড়াও সোরিয়াসিস রোগ সম্পর্কিত আরো যেসব বিষয় নিয়ে এই পোস্টের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হলো- সোরিয়াসিস রোগ কি, সোরিয়াসিস রোগের ছবি, সোরিয়াসিস রোগ সংক্রমণের স্থান, সোরিয়াসিস রোগ নিরাময় যোগ্য কিনা, যেসব কারণে সোরিয়াসিস রোগ বাড়ে, সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ, সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা, সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম, সোরিয়াসিস এর মলম, সোরিয়াসিস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, সোরিয়াসিস রোগের প্রয়োজনীয় সতর্কতা সমূহ ইত্যাদি। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়ঃ ভূমিকা

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানবদেহে শনাক্ত হওয়া বিভিন্ন ধরনের রোগের কথা কম-বেশি সবাই শুনে থাকি। মানবদেহে শনাক্ত হওয়া এমনই একটি রোগের নাম হলো সোরিয়াসিস রোগ।সোরিয়াসিস রোগ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেরই কিছু সাধারন জিজ্ঞাসা থাকে। যেমন- সোরিয়াসিস রোগ কেন হয়? সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি? তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে সোরিয়াসিস রোগ কেন হয়? সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি? এই দুইটির প্রশ্নের সঠিক এবং বিস্তারিত উত্তর নিয়ে হাজির হয়েছি। 

আরো পড়ুনঃ মাথা ঘোরা কিসের লক্ষণ - মাথা ঘোরার ঔষধের নাম কি

তবে এই দুটি প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি কোন রকম স্কিপ করা ছাড়া অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তবেই আপনি সোরিয়াসিস রোগ কেন হয়? সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি? সেই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী ভালোভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

সোরিয়াসিস রোগ কি

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে সোরিয়াসিস রোগ বলতে কি বুঝায় সেই সম্পর্কে আপনাদেরকে অবহিত করা প্রয়োজন। তাই প্রথমেই এখন আমরা সোরিয়াসিস রোগ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সোরিয়াসিস রোগ মানবদেহের একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহজনিত চর্মরোগ। সাধারণত মানুষের ত্বকের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ, পুরনো কোষগুলো মারা যায় এবং সেই জায়গায় নতুন কোষ তৈরি হয়। 

পুরনো কোষ মারা যাওয়া এবং সেই জায়গায় নতুন কোষ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে মানুষের দেহ যে সময় নেয় সেই সময়ের থেকে অনেক কম সময়ে যখন এই প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হয় তখন মানুষের ত্বকে এক ধরনের আঁশযুক্ত লালচে প্রদাহ শুরু হয়। আর মানুষের ত্বকের এই অবস্থাকেই মূলত সোরিয়াসিস রোগ নামে অভিহিত করা হয়। সোরিয়াসিস রোগে মানুষের ত্বকের কোষগুলোর জীবনচক্র আবর্তিত হয় মাত্র ৫ থেকে ৭ দিনে। যেখানে স্বাভাবিক নিয়মে উক্ত প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হতে সময় প্রয়োজন হয় ২৮ দিন। 

আরো পড়ুনঃ কার্ডিয়াক চক্র কি - কার্ডিয়াক চক্র ব্যাখ্যা

সোরিয়াসিস রোগ কোন প্রকার সংক্রামক রোগ নয়। বরং কিছু উল্লেখযোগ্য কারণে মানুষের ত্বক সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হয়। সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আক্রান্ত স্থান শুষ্ক, খসখসে এবং লালচে আকার ধারণ করে। কখনো কখনো আক্রান্ত স্থানটি লালচে হওয়ার পরিবর্তে কিছুটা সাদা রঙেরও হয়। আবার কখনো কখনো এই স্থান থেকে মাছের আঁশের মতো এক ধরনের পাতলা চামড়া উঠতেও দেখা যায়।

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয়

একজন মানুষের দেহে সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় বা একজন মানুষের দেহ সোরিয়াসিস রোগে কেন আক্রান্ত হয় তার পেছনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে বলা বা শনাক্ত করা মুশকিল যে আসলে কোন কারণে একজন মানুষ সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কারণ শনাক্ত করা সম্ভব না হলেও একজন মানুষের সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি কতগুলো নির্দিষ্ট কারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাহলে চলুন সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে সেই নির্দিষ্ট কারণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

  • বংশগত কারণে একজন ব্যাক্তি সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ, বংশের কোন ব্যক্তির সোরিয়াসিস রোগ থাকার দরুন একজন ব্যাক্তি সোরিয়াসিস রোগেআক্রান্ত হয়।
  • শারীরিক কোনো ক্ষত বা আঘাত থাকার ফলে একজন ব্যক্তির সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার কারণে একজন ব্যক্তি সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হয়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে মানুষ সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হয়।
  • গলার ইনফেকশন এর পুনরাবৃত্তির ফলেও মানুষ সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হয়।
  • যেকোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণে মানুষ সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হয়।
  • মানসিক চাপের কারণে একজন ব্যাক্তি সোরিয়াসিস রোগ আক্রান্ত হতে পারে।
  • ধূমপান জনিত কারণে মানুষ সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হতে পারে।

এছাড়াও একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মানুষের সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে আরেকটি বিশেষ কারণ হলো শরীরে ভিটামিন "ডি" এর অভাব তৈরি হওয়া।

সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ

সোরিয়াসিস রোগের বেশকিছু দৃশ্যমান লক্ষণ রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে আমরা খুব সহজেই নিশ্চিত হতে পারি। এই ধরনের দৃশ্যমান সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

  • আক্রান্ত স্থান ছোট ছোট লালচে ছোপ আকৃতি ধারণ করা।
  • আক্রান্ত স্থান শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে যাওয়া।
  • মাছের আঁশের মতো চামড়া উঠতে থাকা। 
  • আক্রান্ত স্থানের রঙ লালচে কিংবা সাদাটে হয়ে যাওয়া।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া ফেটে রক্তক্ষরণ হওয়া।
  • আক্রান্ত স্থানে চুলকানি হওয়া। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে চুলকানি না হতেও পারে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি।

প্রিয় পাঠক আশা করছি এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি জানতে পেরেছেন সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি। তাই উপরে উল্লিখিত সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো যদি আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের মধ্যে কারো শরীরে দেখতে পান তাহলে ধরে নিবেন আপনি অথবা আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উক্ত ব্যক্তি সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত হয়েছে। এবার আলোচনার পরবর্তী অংশে আমরা সোরিয়াসিস রোগের ছবি উল্লেখ করব।

সোরিয়াসিস রোগের ছবি

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে সোরিয়াসিস রোগ সম্পর্কে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার পর এখন নিশ্চয়ই আপনি সোরিয়াসিস রোগের ছবি দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। যদি সোরিয়াসিস রোগের ছবি দেখার জন্য আপনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন তাহলে নিচে উল্লেখিত ছবিগুলো দেখে নিতে পারেন।

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস রোগ সংক্রমণের স্থান 

মানবদেহের কিছু বিশেষ স্থানে সোরিয়াসিস রোগের সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। যেগুলো সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ও স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাহলে চলুন সোরিয়াসিস রোগ সংক্রমণের স্থান গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

  • মাথার ত্বক বা মাথা।
  • হাতের আঙ্গুল ও নখ।
  • পায়ের আঙ্গুল ও নখ।
  • শরীরের বিভিন্ন ভাজযুক্ত স্থান। যেমন-বগল।
  • পিঠ, কোমর, কনুই এবং হাঁটু।
  • হাত বা পায়ের দুই আঙ্গুলের ভাজে।
  • কানের পেছনের অংশে বা সামনের অংশে।
  • হাঁটুর পেছনের অংশে।

সোরিয়াসিস রোগ নিরাময় যোগ্য কিনা 

সোরিয়াসিস রোগ নিরাময় যোগ্য কিনা এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে নিয়ে প্রথমেই বলতে হয় যে, সোরিয়াসিস কোন নিরাময় যোগ্য রোগ নয়। বরং এটি একটি নিয়ন্ত্রণ যোগ্য রোগ। তাই একজন ব্যক্তি সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সোরিয়াসিস রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্ত করা না গেলেও কিছু বিশেষ নিয়ম-কানুন, সর্তকতা এবং চিকিৎসা দ্বারা সোরিয়াসিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সোরিয়াসিস রোগে নারী, পুরুষ কিংবা শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি। 

আরো পড়ুনঃ এক দিনে ফর্সা হওয়ার উপায় - ভেতর থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়

সোরিয়াসিস রোগ এমন একটি রোগ যেটা আক্রান্ত হওয়ার পর আপনি সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে উক্ত রোগ থেকে তাৎক্ষণিক সারিয়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু কিছু সময় পর এর সংক্রমণ আবার আপনার শরীরে দেখা দিবে। তাই যখনই আপনার শরীরে সোরিয়াসিস রোগের সংক্রমণ লক্ষ্য করতে পারবেন তখনই সোরিয়াসিস রোগের সঠিক চিকিৎসা নিবেন এবং সোরিয়াসিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। কখনোই সোরিয়াসিস রোগের সংক্রমকে অবহেলা করবেন না। কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে পরবর্তীতে এই রোগ ক্যান্সার সহ ইরাইথ্রোডার্মার মতো বহু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

যেসব কারণে সোরিয়াসিস রোগ বাড়ে 

সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার পর যেসব কারণে সোরিয়াসিস রোগ বাড়ে তার পেছনে অনেকগুলো বিশেষ কারণ রয়েছে আর এই কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • কিছু বিশেষ ওষুধ সেবনের ফলে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়। আর এই ওষুধগুলো হলো-Oradexon, Inj.Triamcenolone Acetonide, Prednisolone, Betnelan ইত্যাদি।
  • এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের জন্য সেবনযোগ্য কিছু ওষুধ এর ফলেও সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়। যেমন-Terbinafin, Betablocer ইত্যাদি।
  • কর্টিকোস্টেরোইড, লিথিয়াম, ম্যালেরিয়া এবং চর্বি কমানোর ওষুধ সেবনের ফলে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • টনসিলাইটিস বা গলার ইনফেকশন এর কারণে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • বিভিন্ন ধরনের শারীরিক আঘাতের কারণে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • মানসিক চাপ বা মানসিক দুশ্চিন্তার জন্য সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • ধূমপান জনিত কারণে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • শরীরে ভিটামিন "ডি" জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি হওয়ার ফলে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • দুধ জাতীয় খাবার এবং লাল মাংস খাওয়ার ফলে সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।
  • এছাড়াও প্রক্রিয়াজাতকরণ চিনি খাওয়ার ফলেও সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি পায়।

সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা

আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি যে সোরিয়াসিস রোগকে পুরোপুরি নিরাময় করা না গেলেও কিছু সাবধানতা বা নিয়ম-কানুন অনুসরণের মাধ্যমে সোরিয়াসিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উক্ত নিয়ম-কানুন বা সাবধানতার মধ্যে সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। তাই আমরা আমাদের আলোচনার এই পর্যায়ে সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য উত্তম খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

  • ভিটামিন "ডি" সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। যেমন-সামুদ্রিক মাছ, কর্ড মাছের তেল, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণে মিষ্টি আলু খাওয়া।
  • শাকসবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া।
  • সোরিয়াসিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্রকলি খুব কার্যকারী ভূমিকা রাখে। তাই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য তালিকায় ব্রকলি অন্তর্ভুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরী।
  • নিয়মিত বাদাম খাওয়া।
  • সবুজ সবজি খাওয়া। বিশেষ করে পাতাজাতীয় সবজি। যেমন-বাঁধাকপি।

উপরে উল্লেখিত খাবারগুলো সোরিয়াসিস রোগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী। উক্ত খাবারগুলো নিয়মিত সঠিক বা পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার মাধ্যমে সোরিয়াসিস রোগকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম । সোরিয়াসিস এর মলম

সোরিয়াসিস রোগের আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ সাধারণত কিছু ক্রিম বা মলম সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য রোগীদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আক্রান্ত স্থানে কি ধরনের সোরিয়াসিস এর মলম বা সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম ব্যবহার করতে হবে সেটা নির্ধারিত হয় মূলত রোগটির আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা কতটা তীব্র সেই বিষয়ের উপর বা শরীরের কতটুকু অংশ আক্রান্ত হয়েছে সেই বিষয়ের উপর। যদি আক্রান্তের মাত্রা মৃদু হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সোরিয়াসিস এর মলম বা সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম গুলোর মধ্যে যেসব মলম বা ক্রিম ব্যাবহার করার জন্য চিকিৎসকগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো হলোঃ

  • স্টেরয়েড মলম/ক্রিম
  • ক্যালসিপট্রিওল মলম/ক্রিম
  • ইমিউনোমডুলেটর মলম/ক্রিম

এই ধরনের ক্রিম বা মলম গুলো ব্যবহার করার পরেও যদি সোরিয়াসিস রোগের বিস্তার না কমে সেক্ষেত্রে কিছু মুখে সেবনযোগ্য ঔষধ খাওয়ার কথা ডাক্তাররা রোগীদের বলে থাকে। যেমন- সাইক্লোস্পোরিন, এসিট্রেসিন, মিথোট্রেক্সেট, ইটানারসেপ্ট, এডালিমুমাব, ইনফ্লিক্সিমাব ইত্যাদি। তবে এই ধরনের ঔষধ বা ক্রিম গুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই সোরিয়াসিস রোগ থেকে মুক্তি পেতে যেকোনো ধরনের ক্রিম বা মুখে সেবনযোগ্য ঔষধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। অন্যথায় আপনি যে কোন বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় । সোরিয়াসিস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

সোরিয়াসিস রোগের আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা রোগীকে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা মলম আক্রান্ত স্থানে লাগানোর কথা বলে থাকে। সেই সাথে কখনো কখনো কিছু মুখে খাবার ওষুধ ও দিয়ে থাকে সোরিয়াসিস রোগের চুলকানি সহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু সব চেয়ে ভালো হয় তখনই যখন সোরিয়াসিসকে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়ার পূর্বেই কিছু ঘরোয়া কার্যকরী উপায় এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। সোরিয়াসিস রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু উল্লেখযোগ্য সোরিয়াসিস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। তাহলে চলুন সোরিয়াসিস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা বা সোরিয়াসিস রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক।

  • নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা। সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং সোরিয়াসিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে। এক্ষেত্রে প্রতিবার আক্রান্ত স্থান পানি দিয়ে ধোয়ার পরপরই এগুলো ব্যবহার করতে হবে যাতে কোনো ভাবেই ত্বক শুষ্ক থাকতে না পারে। এছাড়াও আপনি চাইলে গোসলের সময় পানির মধ্যে নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে গোসল করতে পারেন।
  • প্রতিদিন স্বল্প পরিমাণে কাঁচা হলুদ খাওয়া। কেননা কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা "অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি" উপাদান আমাদের শরীরকে সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে কিংবা আক্রান্ত হওয়ার পর সোরিয়াসিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • সোরিয়াসিস রোগে ত্বকের প্রদাহ এবং আক্রান্ত স্থানের লালচে দাগ দূর করার জন্য লাল মরিচ খাওয়া প্রয়োজন। কেননা লাল মরিচের মধ্যে আছে একটি বিশেষ উপাদান যা সোরিয়াসিস রোগে ত্বকের প্রদাহ এবং আক্রান্ত স্থানে লালচে দাগ কমাতে সাহায্য করে। আর এই বিশেষ উপাদানটির নাম হলো "ক্যাপসাইসিন"।
  • "অ্যান্ডিরা অ্যারারোবা" নামক একটি ঔষধি গাছের গুড়ার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানে লাগালে খুব সহজেই সোরিয়াসিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে লেবুর রস এর পরিবর্তে ভিনেগারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সোরিয়াসিস রোগ থেকে মুক্তির বা সোরিয়াসিস রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আরেকটি কার্যকরী উপাদানের নাম হলো অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানের শুষ্কতা দূর করতে জাদুকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরা ব্যবহার করার ফলে আক্রান্ত স্থানের চুলকানি প্রশমিত হয়।

সোরিয়াসিস রোগের প্রয়োজনীয় সতর্কতা সমূহ

একজন সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত রোগীর সোরিয়াসিস রোগ থেকে মুক্তির জন্য উপযুক্ত খাদ্য তালিকা, আধুনিক চিকিৎসা কিংবা ঘরোয়া কার্যকরী উপায় এর পাশাপাশি প্রয়োজন কিছু বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা। আর এই ধরনের সর্তকতা সমূহ বা সোরিয়াসিস রোগের প্রয়োজনীয় সতর্কতা সমূহ হলোঃ

  • সোরিয়াসিস রোগের সংক্রমণ যেহেতু শীতকালে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কিংবা সোরিয়াসিস রোগের আক্রান্ত স্থানের শুষ্কতা দূর করতে কিছুক্ষণ পরপর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। কখনোই ত্বককে শুষ্ক রাখা উচিত নয়। এতে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • লাল মাংস, দুগ্ধজাতীয় খাবার, মশলা যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড, মাত্রাতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার কিংবা প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
  • গোসলের সময় সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত স্থান ঘষাঘষি না করা।
  • বেশিক্ষণ সূর্যের তীব্র রোদে না থাকা। তবে শীতের সকালে কিছু সময়ের জন্য সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত রোগী সূর্যের রোদে থাকতে পারে। কেননা এতে শরীরে ভিটামিন "ডি" উৎপাদিত হয়।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনই কোন প্রকার ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয়।
  • মানসিক চাপ বা মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকা।
  • সোরিয়াসিস আক্রান্ত ত্বকের যত্নে কোন প্রকার প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রসাধনী বা সৌন্দর্যবর্ধক ক্রিম ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকা।
  • সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানের শুষ্কতা দূর করতে কখনো ভুলেও গ্লিসারিন ব্যবহার না করা। কেননা এটা আক্রান্তের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
  • ত্বক পরিষ্কারের জন্য সাবান কিংবা চুলের জন্য ব্যবহৃত শ্যাম্পু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা।
  • এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে এলার্জি বৃদ্ধি পায় এমন কোন খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
  • "স্টেরয়েড" জাতীয় উপাদান বিদ্যমান রয়েছে এমন কোনো প্রসাধনী সামগ্রী সোরিয়াসিস আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।

উপরে উল্লেখিত সাবধানতা সমূহ যদি কোন সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত রোগী সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারে তাহলে আশা করা যায় যে, উক্ত রোগী সোরিয়াসিস রোগ থেকে খুব সহজেই নিজেকে মুক্ত করতে পারবে বা সোরিয়াসিস রোগকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারবে।

সোরিয়াসিস রোগ কেন হয় - সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়ঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা আমাদের আজকের পোস্টে সোরিয়াসিস রোগ কি, সোরিয়াসিস রোগ কেন হয়, সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ, সোরিয়াসিস রোগের ছবি, সোরিয়াসিস রোগ সংক্রমণের স্থান, সোরিয়াসিস রোগ নিরাময় যোগ্য কিনা, যেসব কারণে সোরিয়াসিস রোগ বাড়ে, সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা, সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম, সোরিয়াসিস এর মলম, সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়, সোরিয়াসিস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, সোরিয়াসিস রোগের প্রয়োজনীয় সতর্কতা সমূহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। 

আশা করছি আমাদের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার পর আপনি সোরিয়াসিস রোগ সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়বস্তু খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। তারপরেও যদি সোরিয়াসিস রোগ সম্পর্কিত আপনার কোন সাধারন জিজ্ঞাসা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩