গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (১-৯ মাস) পর্যন্ত বিস্তারিত জেনে নিন

আপনি কি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে সঠিক গাইডলাইন খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি পড়ুন। কেননা এই পোস্টের মধ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সমূহের মধ্যে (১-৯ মাস) পর্যন্ত খাবারের সঠিক গাইডলাইন দেওয়ার রয়েছে। তাহলে আর দেরি কেন! ঝটপট সম্পুর্ন পোস্ট পড়ে নিন এবং গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (১-৯ মাস) পর্যন্ত বিস্তারিত জেনে নিন ।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

এছাড়াও এই পোস্টের মধ্যে আরো যেসব বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে সেগুলো হলো- গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়, গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয় এবং গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (১-৯ মাস) পর্যন্ত

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাঃ ভূমিকা

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা এবং শিশুর শারীরিক জটিলতা মোকাবেলা করে সুস্থ্যতা বজায় রাখতে হলে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা আবশ্যক। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় প্রয়োজনীয় সুষম এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরী। সঠিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে যেমন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় তেমনি গর্ভের শিশুর শারীরিক গঠন মজবুত করণ এবং উপযুক্ত মানসিক বিকাশ সাধনের বিষয়টিও নিশ্চিত করা যায়। 

সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ের মধ্যে প্রথম ৩ মাস বাড়তি খাবারের খুব একটা প্রয়োজন পড়েনা। তবে গর্ভকালীন সময়ের মধ্যে পরবর্তী ৪ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের কিছু বাড়তি খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর এই বিষয়টির কথা মাথায় রেখে আমরা এই পোস্টের মধ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কিত ব্যাখ্যা গুলোকে মোট ৩টি ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। অর্থাৎ, প্রথমে আমরা ১ থেকে ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করেছি এবং পরবর্তীতে ৪ থেকে ৬ মাস এবং ৭ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত সময়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। 

আরো পড়ুনঃ হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম

তবে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার পূর্বে একজন নারীর গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত কিছু বেসিক প্রসঙ্গ নিয়ে জানা দরকার। তাই আমরা শুরুতেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায় এবং গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয় সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছি। যাতে করে আপনারা গর্ভকালীন সময়ের সমস্ত বিষয়বস্তু গুলো সম্পর্কে ধাপে ধাপে জানতে পারেন। সুতরাং, আপনি আপনার মনোযোগ না হারিয়ে সম্পূর্ণ পোষ্টটি খুব ভালোভাবে পড়ে নিন।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

সাধারণভাবে একজন নারী বিয়ের পর তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে থাকে। আর এইসব লক্ষণের মাঝে গর্ভধারণের লক্ষণ সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে বুঝে ওঠা প্রতিটা নারীর জন্যই কিছুটা কষ্টকর।কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু বিশেষ এবং নির্দিষ্ট লক্ষণ দ্বারা খুব সহজেই একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। আর গর্ভবতী হওয়ার এই ধরনের লক্ষণ গুলো হলো নিম্নরূপঃ

  • মাথা ঘোরা কিংবা বমি বমি ভাব অনুভূত হওয়া। কখনো কখনো বমি হওয়া। বিশেষ করে সকাল বেলায় কিংবা দিনের যেকোনো সময় ঘুম থেকে উঠে এই ধরনের লক্ষণ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেওয়া।
  • নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড না হওয়া।
  • স্তনের আকৃতি পরিবর্তন হওয়া। অর্থাৎ, পূর্বের তুলনায় স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া এবং এর পাশাপাশি স্তন ভারী হয়ে গিয়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া। গর্ভাবস্থায় কিডনী থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়। আর নিঃসৃত হওয়া এই ধরনের তরল পদার্থ গুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে থাকে।
  • শারীরিক ক্লান্তি অনুভব হওয়া।
  • অল্পতেই মেজাজ গরম হয়ে যাওয়া বা অধিকাংশ সময় মেজাজ খিটখিটে থাকা।
  • হঠাৎ করেই কোন খাবার খাওয়ার প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ তৈরি হওয়া কিংবা হঠাৎ করেই কোন খাবার খাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া।
  • গর্ভধারণের শুরুর দিকে পিরিয়ড হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ভ্যাজাইনা থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি।

এগুলোই হলো একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার পেছনের প্রধান প্রধান লক্ষণ বা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ। যদিও এই বিষয়ে কোনো রকম নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না যে, প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রেই এই সমস্ত লক্ষণ গুলোই দেখা দিবে। কেননা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও ঘটতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে এই সমস্ত লক্ষণ গুলোই নারীদের দেহে প্রকাশ পায়।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়

বেশিরভাগ নারীদের মনেই গর্ভকালীন সময়কে ঘিরে নানা ধরনের কৌতুহল তৈরি হয়। আর এমনই একটি কৌতূহলের বিষয় হলো গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়। আর যেসব নারীদের মনের মধ্যে এই ধরনের কৌতুহল জাগ্রত হয় তাদের উদ্দেশ্যে এখন আমরা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায় সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করব। তাহলে চলুন আর অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলে সরাসরি আলোচনায় যাওয়া যাক।

ইতিমধ্যেই আমরা গর্ভবতী হওয়ার বেশ কয়েকটি লক্ষণ সম্পর্কে জেনেছি। একজন নারীর গর্ভধারণের পর এই সমস্ত লক্ষণ গুলোর মধ্যে একেকটি লক্ষণ একেক সময়ে শরীরের মধ্যে প্রকাশ পায়। যেমন বেশিরভাগ নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের আনুমানিক ৩০ দিন পর মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব দেখা যায়। কেননা এই সময় নারীদের দেহের মধ্যে অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক দুইটি হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে। আবার গর্ভবতী হওয়ার পেছনের আরেকটি অন্যতম লক্ষণ স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া এবং স্তনে ব্যথা অনুভূত হওয়া। 

আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভবতী হওয়ার আনুমানিক ১৫ দিন পর নারীদের দেহে এই রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়। সুতরাং, এই কথা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় যে, নারীদের দেহে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সমূহ কতদিন পর প্রকাশ পায় বা কতদিন পর বোঝা যায়। তবে গর্ভবতী হওয়ার বেশিরভাগ লক্ষণগুলোই গর্ভবতী নারীদের দেহে ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই প্রকাশ পায় বা বোঝা যায়।

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়

গর্ভধারণের পর নারীদের শরীরে যে ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে একটি অন্যতম পরিবর্তন হলো বমি বমি ভাব অনুভূত হওয়া বা বমি হওয়া। কিন্তু প্রতিটি গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রেই যে এই লক্ষণটি প্রকাশ পাবে বিষয়টা মোটেও এমন নয়। তবে যেসব নারীদের ক্ষেত্রে বমি হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় তাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১ মাস কিংবা ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই বমি হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। কারণ এই সময় নারীদের দেহের মধ্যে অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক ২টি হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে। প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি এই আলোচনাটুকু পড়ার মাধ্যমে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (১-৩ মাস)

একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার পর সাধারণত বিভিন্ন খাবারের প্রতি তার আগ্রহ হঠাৎ করেই বেড়ে যায় কিংবা বিভিন্ন খাবারের প্রতি তার হঠাৎ করেই অনীহা চলে আসে। গর্ভকালীন সময়ে এই ধরনের খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়া কিংবা খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসার বিষয়টি একদম স্বাভাবিক। তাই এই বিষয়ে দুশ্চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই। তবে গর্ভবতী মায়েদের প্রথম ৩ মাসের খাবার তালিকায় খুব একটা পরিবর্তন আসেনা। শুধু খেয়াল রাখতে হয় যাতে একজন গর্ভবতী নারী তার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় তার পছন্দ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো ক্যালোরি মেপে খায়। 

এক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে কি পরিমাণ বা কতটুকু পরিমাণ ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত সেই বিষয়টি কতগুলো পরিমাপকের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, গর্ভবতী নারীর শারীরিক ওজন, দৈহিক উচ্চতা এবং প্রতিদিন কতটুকু দৈহিক পরিশ্রম করে থাকে এই বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করেই মূলত গর্ভবতী নারীদের খাদ্যের ক্যালোরির পরিমাণ নির্ধারিত হয়। সেজন্য আপনার ওজন, উচ্চতা এবং দৈহিক পরিশ্রম এর উপর ভিত্তি করে আপনার দৈনিক খাবার তালিকা কেমন হবে সেই বিষয়টি নির্ধারণ করার জন্য আপনি চাইলে যেকোন ভালো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন। 

আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্য ভালো করার উপায় - স্বাস্থ্য ভালো করার ঔষধ

তারপরেও আপনাদেরকে বেসিক ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা নিম্নে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রথম ৩ মাসের খাবার তালিকা সাধারণত কেমন হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে উল্লেখ করেছি। আপনার শারীরিক ওজন যদি গর্ভধারণের পূর্বে আনুমানিক ৫৫ থেকে ৫৯ কেজি পর্যন্ত থেকে থাকে এবং আপনার দৈহিক উচ্চতা যদি ৫ ফুট ২ ইঞ্চি বা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিম্নে উল্লেখিত ডায়েট চার্ট অনুযায়ী প্রথম ৩ মাস খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।

  • ভাত দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া। অর্থাৎ, ২.৫ থেকে ৩ কাপ পর্যন্ত দৈনিক ভাত খাওয়া। এক্ষেত্রে ভাতের চালটা যদি লাল চাল হয় তাহলে বেশি ভালো হয়।
  • রঙিন এবং সবুজ শাকসবজি দৈনিক ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া। অর্থাৎ, ১ থেকে ১.৫ বাটি পর্যন্ত দৈনিক রঙিন শাকসবজি খাওয়া। এই ধরনের রঙিন এবং সবুজ শাকসবজির উদাহরণ হলো-কলমিশাক, লালশাক, ধনিয়াপাতা, পুদিনাপাতা, বরবোটি, সিম, লাউ, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।
  • দৈনিক একটি ডিম সিদ্ধ খাওয়া। খেয়াল রাখতে হবে যাতে ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ হয়।
  • দৈনিক ৫০ গ্রামের মাছ অথবা মাংস খাওয়া।
  • দৈনিক ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ঘন করে রান্না করা ডাল খাওয়া। এখানে ৫০০ গ্রাম বলতে আনুমানিক ২ বাটি ডাল খাওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে।
  • দৈনিক ২.৫ গ্রামের গ্লাসের এক গ্লাস দুধ খাওয়া।
  • কমলা এবং হলুদ রংয়ের ফলমূল দৈনিক ২.৫ গ্রাম পরিমাণে খাওয়া। অর্থাৎ, দৈনিক ১ বাটি পরিমাণে এই ধরনের ফলমূল খাওয়া। যেমন- মালটা, পাকা আম, কাঁঠাল, কমলালেবু ইত্যাদি।
  • এছাড়াও গর্ভবতী মায়েরা গর্ভকালীন এই সময়ে আরো কতগুলো ফলমূল খেতে পারে। আর এই ফলমূল গুলো হলো- আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি, আনার, আমড়া, ড্রাগন ফল, শশা, লেবু ইত্যাদি।
  • দৈনিক সকাল-বিকাল অল্পসংখ্যক বাদাম খাওয়া।
  • ডাবের পানি পান করা।
  • দৈনিক ৮ থেকে ১০ ক্লাস পর্যন্ত পানি পান করা।
  • দৈনিক ৪০০ মাইক্রো গ্রাম ফলিক এসিড সমৃদ্ধ শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়া। এ ধরনের ফলিক এসিড সমৃদ্ধ শাকসবজি এবং ফলমূল এর উদাহরণ হলো- পুদিনাপাতা, ধনিয়াপাতা, ব্রকলি, কিসমিস, বাদাম ইত্যাদি। আবার শুধুমাত্র খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই শরীরে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ হয় না। এর জন্য গর্ভবতী মায়েদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিড যুক্ত কিছু সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ খাওয়া। কেননা শরীরে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ না হলে শিশুর দৈহিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের শরীরে খাবারের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই এই সময়ে সুষম খাদ্য গ্রহণ করার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ভিটামিন এবং মিনারেলের ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।

উপরে উল্লেখিত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মা দৈনিক ১৮০০ গ্রাম ক্যালরির খাবার খেতে সক্ষম হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি গর্ভকালীন এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের কিছু স্বাভাবিক শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। এতে করে মা এবং শিশু উভয়ই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে এবং শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (৪-৬ মাস)

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েরা তাদের পছন্দ এবং রুচি অনুযায়ী খাবার খেতে পারবে। তবে গর্ভবতী মায়েদের পছন্দ এবং রুচি অনুযায়ী খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আর সেটা হলো এই সমস্ত খাবার যাতে কোনোভাবেই অস্বাস্থ্যকর এবং অপুষ্টিকর খাবার না হয়। গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় পরবর্তী ৩ মাস অর্থাৎ, ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময়ে গর্ভবতী মায়েদের খাবারে কিছু অতিরিক্ত ক্যালরির পরিমাণ যুক্ত করতে হয়। কেননা এই অবস্থায় যেহেতু গর্ভের শিশু ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে শুরু করে তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। 

তাই গর্ভকালীন সময়ের ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময়ে প্রথম ৩ মাসের তুলনায় অতিরিক্ত ৩৪০ গ্রাম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, এই সময় প্রতিদিন আনুমানিক ২৫০০ গ্রাম ক্যালরির খাবার খাওয়া উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সময় কি ধরনের পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

  • এই সময় প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন-ব্রাসেলস চারা, চিয়া বীজ, ক্যানোলা তেল, তিসি ও সয়াবিনের তেল, বাদাম, ওয়াল নাট, ইলিশ মাছ, টুনা মাছ, স্যামন মাছ ইত্যাদি।
  • এই সময় প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন- হিমালায়ান লবন, আলু, ভুট্টা, টুনা মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, সেদ্ধ ডিম, দুধ, পাউরুটি, গলদা চিংড়ি, স্ট্রবেরি, দই ইত্যাদি।
  • গর্ভকালীন এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের বেশি বেশি ভিটামিন "ডি" যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কেননা এই সময় গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক এবং চোখের গঠন সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর গঠনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আর এই সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং মস্তিষ্কের গঠনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভিটামিন "ডি"। আর ভিটামিন "ডি" সমৃদ্ধ খাবারের উদাহরণ হলো- দুধ, লাল চাল, গম, ডিমের কুসুম, দই, স্যামন মাছ, মাশরুম, ওটমিল, টুনা মাছ, মাখন, বাদাম, বার্লি ইত্যাদি।
  • এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। আর এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এবং মিনারেলের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবারের উদাহরণ হলো- শিমের বিচি, কাজুবাদাম, পালংশাক, মসুর ডাল, ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত মাছ, খেজুর, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ডুমুর,, কিসমিস ইত্যাদি।
  • এছাড়াও খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত এবং তার পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়মমাফিক কিছু সময়ের জন্য হাঁটা-চলা করা উচিত।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (৭-৯ মাস)

গর্ভকালীন সময়ের মধ্যে ৭ থেকে ৯ মাসের সময়টুকু গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। কেননা এই সময় গর্ভের শিশুর বেড়ে ওঠার পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং সেইসঙ্গে শরীরের পুষ্টির চাহিদাও বেড়ে যায়। তাই এই সময় গর্ভবতী মায়ের কিছুক্ষণ পরপর ক্ষুধা লাগে। গর্ভকালীন ৭ থেকে ৯ মাস সময়ে পূর্বের মাস গুলোর তুলনায় অতিরিক্ত ৪৫০ গ্রাম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়। যেহুতু এই সময় গর্ভবতী মায়ের খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায় তাই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, কখনোই একবারে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ যাতে না করা হয়।

আরো পড়ুনঃ চিকন হওয়ার উপায় - চিকন হওয়ার ঔষধ  

কেননা এতে করে মা এবং শিশুর শারীরিক সমস্যা হতে পারে। সব সময় চেষ্টা করবেন কিছুক্ষণ পরপর অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করা। প্রয়োজন হলে দিনে ৩ বেলার জায়গয় ৬ বেলা খাদ্য গ্রহণ করবেন।গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার ৭ থেকে ৯ মাস চলাকালীন সময়ে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সমস্ত খাবার গুলো কি কি।

  • এই সময়ে দৈনিক প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার প্রয়োজন হয়। কারণ এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা হলে গর্ভের শিশু পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। সেজন্য এই সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এর পাশাপাশি দেহের মিনারেলের চাহিদা মেটাতে ডাবের পানি পান করা উচিত। কারণ ডাবের পানিতে থাকা মিনারেল গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্লাসেন্টার লিকুইড এর চাহিদা পূরণ করে থাকে।
  • এই সময় যেহেতু গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয় তাই এই সমস্যার সমাধান করার জন্য গর্ভবতী মায়েদের আঁশযুক্ত ফলমূল এবং শাকসবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। আর এই ধরনের আঁশযুক্ত ফলমূল গুলো হলো- পেয়ারা, কদবেল, আমড়া, আতাফল, ব্ল্যাকবেরি, কাঁঠাল, আমলকী, আপেল, নারকেল ইত্যাদি। আঁশযুক্ত শাকসবজির উদাহরণ হলো- বাঁধাকপি, ফুলকপি, কচু শাক, কলমিশাক, পুঁইশাক, মুলাশাক, লাউ এবং মিষ্টি কুমড়া শাক, ওলকপি, সিম, পটল, ডাঁটা, কলার মোচা ইত্যাদি।
  • এছাড়াও এই সময়ে গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশুর শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে নিয়মিত ৩০ মিনিট সময় ধরে হাঁটা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু সাধারণ ব্যায়াম করা উচিত।
  • যেকোনো ধরনের খাবার রান্না করার সময় কম তেল ব্যবহার করে রান্না করা উচিত। কেননা অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করার ফলে খাবারের ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে গেলও পুষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। এছাড়া অতিরিক্ত তেল খাওয়ার ফলে পেটের নানা ধরনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। এবার আমরা গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার সম্পর্কে জানবো। কারণ গর্ভবতী মায়ের জন্য যেমন কিছু উপযুক্ত খাবার সংশ্লিষ্ট খাদ্য তালিকা রয়েছে। তেমনি কিছু নিষিদ্ধ খাবারের তালিকাও রয়েছে। আর গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার গুলো হলো নিম্নরূপঃ

  • গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। কেননা অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর ক্যাফিনযুক্ত খাবারের উদাহরণ হলো- চা, কফি ইত্যাদি।
  • গর্ভাবস্থায় আনারস, কলা এবং পেঁপে না খাওয়াই উত্তম। কেননা এ ধরনের খাবার শরীরের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে।
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আদা খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিত। যাতে করে শরীরে অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরী হতে না পারে বা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে না পারে।
  • গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের ধূমপান এবং মদ্পান করা উচিত নয়। কারণ এর ফলে প্রি-ম্যাচিওর শিশু জন্ম গ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি হয়। আবার কখনো কখনো মৃত সন্তান জন্ম গ্রহণের সম্ভাবনাও তৈরি হয়।
  • গর্ভাবস্থায় হাফ সিদ্ধ বা কাঁচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।
  • গর্ভাবস্থায় অপাস্তুরিত দুধ খাওয়া উচিত নয়। কেননা গর্ভাবস্থায় অপাস্তুরিত দুধ খাওয়া গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
  • গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের রোস্ট কিংবা পোড়া মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই ধরনের খাবার খাওয়ার পরে শরীরের মধ্যে টকসোপ্লাজমা নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি হয় যা পরবর্তীতে শরীরের ক্ষতি করে থাকে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (১-৯ মাস) পর্যন্তঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা আমাদের আজকের এই পোস্টের মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়, গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়, গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা এবং গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। তাহলে আমাদের আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নতুন নতুন তথ্য জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩