হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ – পেটে ব্যাথা হলে করণীয়
আপনি কি জানেন হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে
আমাদের এই পোস্টটি আপনার জন্যই। কেননা এই পোস্টের মধ্যে আমরা হঠাৎ হঠাৎ পেট
ব্যথার কারণ এবং পেটে ব্যাথা হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা
করেছি। সুতরাং, দেরী না করে ঝটপট সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে নিন এবং হঠাৎ হঠাৎ
পেট ব্যথার কারণ সম্পর্কে জেনে নিন।
এছাড়াও আমাদের এই পোস্টের মধ্যে পেট ব্যথা সম্পর্কিত আরো যেসব বিষয় নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হলো- পেটে ব্যথা কমানোর উপায়, পেট
ব্যাথা কমানোর দোয়া বা পেট ব্যাথা কমানোর উপায় দোয়া, পেট ব্যাথার ট্যাবলেট
এবং পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ – পেটে ব্যাথা হলে
করণীয়
- ভূমিকা
- হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ
- পেটে ব্যাথা হলে করণীয়
- পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
- পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া । পেট ব্যাথা কমানোর উপায় দোয়া
- পেট ব্যাথার ট্যাবলেট । পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ
- হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ – পেটে ব্যাথা হলে করণীয়ঃ শেষ কথা
হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ – পেটে ব্যাথা হলে করণীয়ঃ ভূমিকা
আমাদের মধ্যে এমন মানুষ খুব কম দেখা যায় বললেই চলে যারা কিনা হঠাৎ হঠাৎ পেট
ব্যথার সমস্যায় ভোগে না। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ আসলে কি সেই
বিষয়টি অনেকের কাছেই অজানা রয়েছে।আর অজানা থাকার ফলে হঠাৎ হঠাৎ পেট
ব্যথার কারণ নির্দিষ্টভাবে বা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পেরে মারাত্মক
স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্মুখীন হচ্ছে এইসব মানুষ।
আরো পড়ুনঃ
মাথা ঘোরা কিসের লক্ষণ – মাথা ঘোরার ঔষধের নাম কি
তাই এইরকম স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর উদ্দেশ্যে আজকে আমরা আপনাদেরকে হঠাৎ হঠাৎ পেট
ব্যথার কারণ সম্পর্কে অবহিত করতে চলেছি। সুতরাং, মনোযোগ না হারিয়ে
আমাদের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়ে নিন। তাহলে
আপনি আপনার হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে জানতে
পারবে।তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ
আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার সমস্যায় ভুগলেও সবার
ক্ষেত্রে এই ধরনের হঠাৎ হঠাৎ পেটব্যথা হওয়ার কারণ কিন্তু এক
নয়। অর্থাৎ, ব্যক্তিভেদে এই কারণগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে
হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ হিসেবে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণকেই আমরা প্রধান কারণ
হিসেবে দায়ী করতে পারি। আর আমরা এই ধরনের কারণগুলো সম্পর্কে নিম্নে
বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ আলোচনা করেছি।
প্রচন্ড খিদে পাওয়ার কারণে
অনেক সময় প্রচন্ড খিদে পাওয়ার কারণে হঠাৎ করে পেট ব্যথার সমস্যা দেখা
দেয়। তবে যারা বেশিরভাগ সময়ই না খেয়ে থাকে কিংবা খাবার খাওয়ার উপযুক্ত
সময়ে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাদের ক্ষেত্রেই এ ধরনের হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার
সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেকের মধ্যেই সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে
নাস্তা না করার অভ্যাস রয়েছে। আর দীর্ঘদিন যাবৎ এ ধরনের অভ্যাস গড়ে
ওঠার কারণ পেট ব্যথার সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বদহজম বা ফুড পয়জনিং এর কারণে
সাধারণত অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার
ফলে হজমের মধ্যে গরমিল দেখা দেয়। যার ফলে বদহজম বা ফুড পয়জনিং
এর সমস্যা হয় এবং পেট ব্যথা শুরু হয়। এ ধরনের পেট ব্যথায় পেট
থেকে শব্দ বা আওয়াজ হয়, পেট মোচড়ানো, বমি বমি ভাব হওয়া এবং পাতলা
পায়খানার সমস্যা দেখা দেয়।
গ্যাসের সমস্যার কারণে
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত তেল-মসলা এবং চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য
পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যার ফলে হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথা করা শুরু
হয়। পেটে গ্যাসের সমস্যার কারণে যদি পেট ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে এই ধরনের
পেট ব্যথার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু বিশেষ উপসর্গ রয়েছে। আর
এগুলো হলো পেট এবং বুকের মাঝখানে জ্বালাপোড়া করা, পেট ফেঁপে
যাওয়া, ঢেকুর ওঠা, বমি বমি ভাব দেখা দেওয়া, পেট ফুলে যাওয়া
ইত্যাদি।
পেপটিক আলসারের কারণে
যদি পেটের মধ্যে হঠাৎ ব্যথা করার সমস্যাটি কিছুটা এই রকম হয় যে, হঠাৎ করে পেটের
মাঝের অংশে কিংবা উপরের অংশে জ্বালাপোড়া করছে, পেট কামড়ে
ধরছে, প্রচুর ঢেকুর উঠছে আবার সেই সঙ্গে বুকের দিকেও জ্বালাপোড়া করছে তাহলে
ধরে নিতে হবে এই ধরনের পেট ব্যথা হওয়ার পেছনের কারণ হলো পেটে পেপটিক আলসার
হওয়া। আর যদি আপনি আপনার পেট ব্যথার সমস্যায় এই ধরনের লক্ষণ গুলো
দেখতে পান তাহলে দেরি না করে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। নাহলে
পরবর্তীতে বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার কারণে
পিত্তথলি বা গলব্লাডারে পাথর জমা হওয়ার কারণে মাংস জাতীয় খাবার এবং অতিরিক্ত
তেল-মসলা জাতীয় খাবার খাওয়ার পর পেটের মধ্যে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। আর
সেইসঙ্গে বমিও হয়। পিত্তথলিতে পাথর জমার কারণে যদি পেটের মধ্যে ব্যথা হয়ে
থাকে তবে এি ধরনের ব্যথা প্রধানত পেটের ডান অংশের পাঁজরের নিচের দিক থেকে
শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ডান পাশের কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সাধারণত এই ধরনের পেট
ব্যথা জনিত সমস্যা কিংবা পিত্তথলিতে পাথর জমার সমস্যায় পুরুষদের তুলনায় মহিলারা
বেশি আক্রান্ত হয়।
আর তাই আপনার শরীরে যদি এই রকম পেট ব্যথার লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে কোনো রকম
বিলম্ব না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু
করবেন। কেননা এই লক্ষণ গুলোকে অবহেলা করার ফলস্বরূপ আপনাকে পরবর্তীতে
মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে।
অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের কারণে
অনেক সময় আমরা পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার মত উপসর্গ গুলোকে লক্ষ্য করতে
পারি। কিন্তু এই ধরনের উপসর্গ গুলো লক্ষ্য করার পেছনে সবসময় যে শুধু
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকেই দায়ী করা যাবে বিষয়টা মোটেও এমন নয়। কেননা কিছু কিছু
ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের কারণেও পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার মতো উপসর্গ
দেখা দেয় এবং পেট ব্যথা হয়। এছাড়াও অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের কারণে পেটের বাম
দিকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয় এবং এই ব্যথা ধীরে ধীরে পেছনের দিকে ছড়িয়ে
পড়ে। আর পেট ব্যথা অনুভূত হওয়ার সঙ্গে বমি হতেও দেখা যায়।
কিডনীতে পাথর জমা বা অন্যান্য কিডনী জনিত সমস্যার কারণে
কিডনীতে পাথর জমা হওয়া, অন্যান্য কিডনী জনিত প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার কিংবা কিডনী
জনিত কোন জটিল রোগের কারণে মূলত পেটের উপরের অংশের ডানদিকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত
হয়। আর এই ব্যথা ধীরে ধীরে তলপেটের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিডনী জনিত
সমস্যার মধ্যে যেকোনো ধরনের সমস্যায় প্রচন্ড পেট ব্যথা অনুভূত হয় এবং
কিছুক্ষণ পরপর এই ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে আবার কিছুক্ষণ পরপর স্বাভাবিক
হয়ে যায়। এছাড়াও কিডনী জনিত সমস্যায় পেটে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি বমি
হওয়া কিংবা শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার লক্ষণ গুলোও দেখা দেয়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে
হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ হিসেবে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যাকেও দায়ী
করা যেতে পারে। তবে এই ধরনের সমস্যার উপসর্গ সমূহ হলো নাভির
মাঝখান থেকে ব্যথা শুরু হয় ধীরে ধীরে তলপেটের ডান পাশে ব্যথা ছড়িয়ে
পড়া, ব্যথার তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া এবং তলপেটের ডান পাশে যেখানে
ব্যথা অনুভূত হচ্ছে সেখানে হাত দিলেও প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা।
আমাশয় এর কারণে
হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথা হওয়ার পেছনে একটি অন্যতম কারণ হলো আমাশয় রোগে আক্রান্ত
হওয়া।কেননা এ ধরনের রোগের প্রধান লক্ষণ হলো কিছুক্ষণ পরপর পেটে তীব্র ব্যথা
অনুভূত হওয়া এবং সেইসঙ্গে বারবার পাতলা পায়খানা হওয়া।
জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের সমস্যার কারণে
নারীদের জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের সমস্যার কারণেও হঠাৎ হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভূত
হয়। কোন নারী যদি জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের রোগে আক্রান্ত হয় তবে তলপেটে
প্রচন্ড ব্যথা হওয়ার সঙ্গে প্রতিবার প্রস্রাব হওয়ার সময় প্রস্রাবে
জ্বালাপোড়া হয় এবং কখনো কখনো শরীরে প্রচন্ড জ্বর আসে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিল হঠাৎ হঠাৎ পেটে ব্যথা হয়। এ ধরনের
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আঁশযুক্ত শাকসবজি এবং
ফলমূল বেশি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেইসঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করা সম্ভব।
পেটে ব্যাথা হলে করণীয়
পেটে ব্যথা হওয়া সবার জন্যই প্রচন্ড অস্বস্তিকর একটি বিষয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব
সবাই চাই কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে এই যন্ত্রণা থেকে রক্ষা
পেতে। আর সেজন্যই এখন আমরা আপনাদের সামনে পেটে ব্যাথা হলে
করণীয় সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়বস্তু গুলো তুলে ধরব। আমরা জানি পেট
ব্যথা হওয়ার পেছনে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে এবং সেই কারণ গুলোর আলাদা
আলাদা উপসর্গ বা লক্ষণও রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (১-৯ মাস) পর্যন্ত বিস্তারিত জেনে নিন
আর এই উপসর্গ বা লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই বুঝে উঠতে সক্ষম হয়ে
থাকি যে, পেট ব্যথার পেছনের কারণটা আসলে কি। সুতরাং, আপনার যখনই পেট ব্যথা অনুভূত
হবে তখনই আপনি প্রাথমিকভাবে উপরে উল্লেখিত পেট ব্যথার উপসর্গ সমূহের সঙ্গে
মিলিয়ে দেখবেন। আর মিলিয়ে দেখার পর যদি দেখেন যে, এটা সাধারণ বদহজম
কিংবা গ্যাসের সমস্যাজনিত পেটব্যথা তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় গ্যাসের
ঔষধ যেকোনো ফার্মেসি থেকে কিনে খেতে পারেন কিংবা পেট ব্যাথা কমানোর কিছু
সাধারণ ঔষধ কিনে খেতে পারেন।
আর ঔষধ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেও যদি আপনার পেট ব্যথা ভাল না হয় কিংবা
আপনার পেট ব্যথার লক্ষণ গুলো আপনার কাছে যদি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় যেমন-
প্রচন্ড পেট ব্যথা হওয়া, সেই সঙ্গে শরীরে প্রচন্ড জ্বর আসা, বমি হওয়া
ইত্যাদি উপসর্গ বা লক্ষণ গুলো আপনার শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে কোনরকম অবহেলা
না করে সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। কেননা পেট ব্যথার এই সমস্ত লক্ষণ
গুলো মোটেও সাধারণ পেট ব্যথার লক্ষণ নয়।
পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
আমাদের যখন পেট ব্যথা হয় তখন পেট ব্যাথা কমানোর জন্য বা পেট ব্যথা দূর করার জন্য
আমরা অধিকাংশ সময়ই তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা নিতে সক্ষম হই
না। যার জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় পেট ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পরিত্রান পাওয়ার
কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা। আর সেজন্যই আমরা নিম্নে এমন
কতগুলো পেটে ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে ব্যাখ্যা
করেছি। সুতরাং আপনি যদি আপনার পেট ব্যথা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশমিত করতে
চান তাহলে নিম্নে উল্লেখিত পেটে ব্যথা কমানোর উপায় সমূহ ভালোভাবে পড়ে নিন।
কলা ও আপেল খাওয়ার মাধ্যমে
ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পেট ব্যথা কমানো সম্ভব। এছাড়াও ফাইবার
যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পেটের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি ডায়রিয়া জনিত সমস্যার
সমাধান হয় এবং বমি বমিভাব দূর হয়। সেজন্য যেহেতু কলা ও আপেলের মধ্যে
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তাই পেট ব্যথা কমাতে কলা ও আপেল খাওয়া
প্রয়োজন।
আদা খাওয়ার মাধ্যমে
আদার মধ্যে থাকা “অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি” উপাদান ব্যথা নিরাময়ের জন্য প্রাকৃতিক
ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই পেট ব্যথা কমাতে এবং বমি বমি ভাব দূর
করতে আদা খাওয়ার ভূমিকা অপরিসীম। তাই আপনি আপনার পেট ব্যথা কমাতে বা
পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করতে অল্প পরিমাণ আদা কুচি করে পানি দিয়ে গিলে খেতে
পারেন অথবা অল্প পরিমাণ আদা চিবিয়ে খেতে পারেন।
এছাড়াও বদহজম জনিত সমস্যা বা খাবারের প্রতি অরুচি জনিত সমস্যা দূর করতে লবণ
এবং লেবুর রস মিশ্রিত পানিতে এক টুকরো আদা কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখার পর
আদার টুকরোটাকে রোদে শুকিয়ে নিয়ে প্রতিদিন প্রতিবেলা খাবার গ্রহণ করার পর
খাওয়া হলো বেশ কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়।
নরম ভাত খাওয়ার মাধ্যমে
পেট ব্যথা হলে কোন ধরনের তেল-মসলা জাতীয় খাবার না খেয়ে নরম করে রান্না করা ভাত
খাওয়া গেলে সহজে পেট ব্যথা ভাল হয়ে যায়। তবে পেট ব্যাথা দূর
করতে শুধুমাত্র নরম ভাত না খেয়ে এর সঙ্গে কোন একটা ঝোল জাতীয় তরকারি খেলে
বেশি ভালো হয়। আর এক্ষেত্রে ঝোল জাতীয় তরকারিটা অবশ্যই
তেল-মসলা কম দিয়ে রান্না করে নিতে হবে।
তুলসী পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে
পেট ব্যথা দূর করতে দুই চামচ তুলসী পাতার রস এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে
দিনের মধ্যে তিন বার পান করা হলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বিশেষ করে
মেয়েদের মাসিকের ব্যথা দূর করতে এইভাবে তুলসী পাতার রস খাওয়া
গেলে তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়।
পুদিনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমে
পুদিনা পাতাকে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা পুদিনা
পাতার মধ্যে পেটের বদহজমের সমস্যা, বমি বমি ভাবের সমস্যা এবং পেট ব্যথার
সমস্যা দূর করার জাদুকরী গুণাবলী রয়েছে। আর এর জন্য আপনি
চাইলে কয়েকটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন কিংবা চায়ের মধ্যে পুদিনা
পাতা মিশিয়েও খেতে পারেন।
কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অন্যতম উপায় হলো কিসমিস
খাওয়া। পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধান করতে এবং পেট জ্বালাপোড়ার সমস্যা
সমাধান করতে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এক মুঠো কিসমিস এক গ্লাস পানিতে
ডুবিয়ে রাখুন এবং পরদিন সকালে উঠে কিসমিস গুলোকে পানি থেকে ছেকে নিয়ে ভালোভাবে
ব্লেন্ড করে বাসি পেটে খেয়ে ফেলুন। এইভাবে নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে
আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
বেদানার রস খাওয়ার মাধ্যমে
ডায়রিয়ার সমস্যা দূর করতে কিংবা ডায়রিয়ার ব্যথা দূর করতে দিনের মধ্যে
দুই বেলা নিয়ম করে এক কাপ বেদানা রস খাওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে আরাম
পাওয়া যায়। তাই আপনার যদি কখনো ডায়রিয়ার সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এইভাবে
বেদানার রস খেয়ে দেখতে পারেন।
ত্রিফলা খাওয়ার মাধ্যমে
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির মধ্যে এক চা-চামচ
ত্রিফলা মিশিয়ে পান করা হলে পেটের অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
হয় এবং অনায়াসে পেট ব্যথা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
হিটিং প্যাড ব্যবহার করার মাধ্যমে
পেটের যেকোনো ধরনের ব্যথা প্রশমিত করতে হিটিং প্যাডের মাধ্যমে পেটের ওপর গরম সেক
দিলে সাথে সাথে আরাম পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে এই কাজটি করার মাধ্যমে বমি বমি
ভাবও দূর হয়ে যায়। তবে খুব বেশি গরম থাকা অবস্থায় হিটিং প্যাড দিয়ে পেটে
সেক দিবেন না এবং অতিরিক্ত সময় ধরেও পেটে সেক দিবেন না। কেননা এতে করে
স্কিনের সমস্যা হতে পারে।
পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া । পেট ব্যাথা কমানোর উপায় দোয়া
প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ, পেটে ব্যাথা হলে করণীয়
এবং পেটে ব্যথা কমানোর উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এবার আমরা আরেকটি নতুন টপিক
নিয়ে আপনাদের সামনে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে চলেছি। আর এই টপিকটি
হলো পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া বা পেট ব্যাথা কমানোর উপায় দোয়া।
বেশিরভাগ মানুষ পেট ব্যথার সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার উদ্দেশ্যে গুগলে পেট
ব্যাথা কমানোর দোয়া বা পেট ব্যাথা কমানোর উপায় দোয়া লিখে সার্চ
দিয়ে থাকে। তাই তাদের উদ্দেশ্যে আমরা নিম্মে পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া
গুলো উল্লেখ করতে চলেছি। ইসলাম ধর্মে মূলত সব ধরনের রোগ-বালাই থেকে মুক্তি
পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের দোয়া এবং আমলের কথা উল্লেখিত রয়েছে। ঠিক তেমনি
পেট ব্যাথা কমানোর জন্য কিছু আমল এবং দোয়া সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখিত
রয়েছে যে-
উসমান ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি (রাঃ) থেকে হাদিসে বর্ণিত- “উসমান ইবনে আবুল
আস আস-সাকাফি (রাঃ) একদা এক সময় রসুল (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে উনার পেট ব্যাথার
কথা বললেন। সেইসঙ্গে তিনি রসুল (সাঃ)-কে আরো বললেন যে,
ব্যাথা আমাকে অস্থির করে তুলেছে। এই কথা শুনে রসুল (সাঃ) উসমান ইবনে আবুল আস
আস-সাকাফি (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন- ‘তুমি তোমার ব্যাথার স্থানে ডান হাত রেখে
৩ বার বিসমিল্লাহ বলো।” আর তারপর ৭ বার বলো-
আরবিঃ أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ
বাংলা উচ্চারণঃ
“আউজু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।”
বাংলা অর্থঃ
“আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে
মুক্তি চাচ্ছি।”
এরপর রসুল (সাঃ)- এর নির্দেশ অনুযায়ী উসমান ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি
(রাঃ) এই দোয়াটি ৭ বার পড়লেন এবং পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ
তা’আলার অশেষ রহমতে তিনি পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেলেন।তারপর থেকে উসমান
ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি (রাঃ) তার পরিবারের সকল সদস্যকে এবং অন্যদেরকেও পেট
ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই দোয়া পাঠ করার জন্য নির্দেশ দিতেন। (মুসলিম
শরীফঃ ৪১৯৯, আবু দাউদ শরীফঃ ৩৮৫১)
আরো পড়ুনঃ নাকের পলিপাস অপারেশন খরচ – বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসা
অন্য এক হাদিসে আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে- রসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো রকম অসুস্থতা অনুভব করে অথবা কোনো ভাই অসুস্থতা
কিংবা অস্বাভাবিকতা অনুভ করে তখন সে যেন এই দোয়াটি পড়ে, তাহলে সে সুস্থ হয়ে যাবে-
দোয়াঃ “ربنا الله الذي في السماء تقدس اسمك، أمرك في السماء والأرض، كما
رحمتك في السماء فاجعل رحمتك في الأرض، اغفر لنا حوبنا وخطايانا أنت رب
الطيبين، أنزل رحمة من رحمتك وشفاء من شفائك على هذا الوجع”
বাংলা
উচ্চারণঃ “রাব্বুনাল্লাহুল লাজি ফিস সামা-ই তাকাদ্দাসা ইসমুক, আমরুকা ফিস
সামা-ই ওয়াল আরদ্ব, কামা রাহমাতুকা ফিস সামা-ই, ফাজআল রাহমাতুকা ফিল আরদ্ব,
ইগফির লানা হুউবানা ওয়া খাতা-য়া-না আনতা রাব্বুত তাইয়িবিন, আনযিল রাহমাতাম মিন
রাহমাতিকা, ওয়া শিফাউম মিন শিফা-ইকা আলা হাজাল ওয়াজ-ই।”
বাংলা অর্থঃ “হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আসমানে রয়েছেন। আপনার নাম
সম্মানিত, আসমান-জমিনে আপনার কর্তৃত্ব, আসমানে যেমন আপনার রহমত তেমনি জমিনেও
বর্ষণ করুন। আমাদের পাপ ও গুনাহ মার্জনা করুন। আপনি সুস্থ-সৎদের প্রতিপালক,
আপনার বিপুল রহমত থেকে রহমত বর্ষণ করুন। এই ব্যথা-যন্ত্রণায় আরোগ্য দান করুন।”
(আবু দাউদ শরীফঃ৩৮৯২, নাসায়ি হাদিসঃ ১০৮৭৬)
সুতরাং, পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনিও উপরিউক্ত দুইটি আমল করার মাধ্যমে সহজেই
পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
পেট ব্যাথার ট্যাবলেট । পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ
পেট ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য যেমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং দোয়ার
আমল করার মাধ্যমে পেট ব্যথা কমানো সম্ভব। ঠিক তেমন ভাবেই পেট ব্যাথার
ট্যাবলেট কিংবা পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমেও পেট ব্যথা কমানো
সম্ভব। তবে যেহেতু পেট ব্যথা হওয়ার পেছনের কারণগুলো ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন
ভিন্ন হয়ে থাকে তাই কোন ধরনের পেট ব্যথার জন্য কোন ধরনের ঔষধ খাওয়া
প্রয়োজন এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া ভালো।
কেননা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ধরনের ঔষধ খাওয়ার ফলে নানা ধরনের
শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরা আপনাকে পরামর্শ দিব নিম্নে উল্লেখিত
পেট ব্যাথার ট্যাবলেট বা পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের
পরামর্শ নেবেন। তাহলে চলুন এবারপেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ গুলো সম্পর্কে জেনে
নেই।
- Sergel (সারজেল) – 20 mg
- Omep (ওমেপ) – 20 mg
- Zinetac Tablet (জিনট্যাক ট্যাবলেট) – 150 mg
- Rabium Tablet (র্যাবিয়াম ট্যাবলেট) – 10 mg
- Rabeloc Tablet (র্যাবেলক ট্যাবলেট) – 10 mg
- Algin (অ্যালজিন) – 50 mg
- Alve (এ্যালভি) – 6o mg
- Viset (ভিসেট) – 50 mg
হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ – পেটে ব্যাথা হলে করণীয়ঃ শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা আমাদের আজকের পোস্টের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ, পেটে
ব্যাথা হলে করণীয়, পেটে ব্যথা কমানোর উপায়, পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া বা পেট
ব্যাথা কমানোর উপায় দোয়া, পেট ব্যাথার ট্যাবলেট বা পেট ব্যাথা কমানোর
ঔষধ সম্পর্কিত বিষয়বস্তু গুলো নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। আশা
করছি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। সেইসঙ্গে আমাদের এই
পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে এই পোস্টটিকে অবশ্যই আপনার
বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ
থাকবেন। ধন্যবাদ।